ইফতারে রঙ ও রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার

ইফতারে রঙ

 

ইফতারে রঙরাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার

 

পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়ে গেছে। দেখতে দেখতে রহমতের দশ দিন ও পার হয়ে গেল। রমজান মাস শুরু হওয়ার সাথে সাথে শহরের আনাচে কানাচে দেখা যায় রকমারি ইফতারের পশরা। রঙ-বেরঙের এসব ইফতার দৃষ্টি আকর্ষক ঠিকই, কিন্তু দীর্ঘ সময় পানাহার থেকে বিরত থাকার পর এসব মুখ-রোচক ইফতার কতটা স্বাস্থ্যসম্মত সেটাও জেনে নেয়া উচিত।

কিছু নীতিবর্জিত বিক্রেতা আছেন যারা খাবারে ফুড কালারের দাম বেশি (প্রায় ২৫ গুণ বেশি) বলে কম দামে কাপড়ের রঙ ব্যবহার করে থাকেন, যার ফলাফল ভয়াবহ।

চলুন তবে জেনে নেই- 

ইফতারে রঙের ব্যবহার আমদের শরীর-স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর।

১ ।

ইফতারে বেশিরভাগ মানুষের পছন্দের তালিকায় থাকে নানা রকম ভাজা-পোড়া খাবার। আলুর চপ, বেগুনী, পিয়াজু, পাকোড়া, ডিম চপ, ভেজেটেবল কাটলেট, চিকেন ফ্রাই সহ আরো কত কি। যার বেশিরভাগ তৈরিতেই ব্যবহৃত হয় অস্বাস্থ্যকর রঙ ও পোড়া তেল। আলুর চপ, চিকেন ফ্রাই এবং এ ধরনের অন্যান্য ভোজ্য খাবারে অতি মাত্রায় রঙের ব্যবহার লক্ষ্যনীয়। এসব রঙ পেটের পীড়া, হজমের সমস্যা, ক্ষুধামন্দা, খাওয়ায় অরুচি, বমি ভাব, গ্যাস্ট্রিক ও আলসার সৃষ্টি করে।

২ ।

জিলাপি, বুন্দিয়া ও অন্যান্য মিষ্টি দ্রব্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে ভেজাল চিনি। এর রাসায়নিক নাম সোডিয়াম সাইক্লোমেট।অধিকতর মিষ্টি করতে ব্যবহৃত হচ্ছে স্যাকারিন, সুকরালেস ইত্যাদি।

আরো বেশি চিত্তাকর্ষক করার জন্যে মেশানো হয় নকল লাল, হলুদ বা বাসন্তি রঙ; যা একই ভাবে শরীরের জন্য বিপদজনক। এছাড়া বেশিক্ষণ মুচমুচে রাখতে ভোজ্য তেলের সাথে মেশানো হয় পোড়া মবিল। এসবই পরিপাকতন্ত্রের জন্য খুব খারাপ।

৩ ।

যাদের সামর্থ্য একটু কম কিংবা ভাজা পোড়া এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেন তাদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে রয়েছে মুড়ি। অথচ শুনলে অবাক হবেন কিভাবে এ মুড়িকে প্রাণঘাতি হিসেবে বাজারে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। মুড়িকে বড় ও আকর্ষনীয় দেখাতে ব্যবহার করা হয় ইউরিয়া সার আর ধবধবে সাদা বানানোর জন্য ব্যবহৃত হয় সোডিয়াম হাইড্রো সালফাইড, যার আরেক নাম হাইড্রোজ। এগুলো আমাদের শরীরের জন্য কততা ক্ষতিকর তা মনে হয় নতুন করে বলার কিছু নেই। ঠিক একই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে কালো ছোলাকে পরিষ্কার করতে। এসব রঙ ও কেমিক্যাল দীর্ঘ দিন গ্রহণে লিভার ও অস্থিমজ্জার মারাত্মক ক্ষতি সাধন হয়ে থাকে।

৪ ।

এমন কাঠফাটা গ্রীষ্মকালে এক-দু গ্লাস শরবত ছাড়া ইফতার যেন কল্পনাই করা যায় না। আর শরবত তৈরির ক্ষেত্রে বেশিরভাগ মানুষই শরণাপন্ন হন প্যাকেটজাত গুড়া শরবত এ, যা পানিতে দিলেই মিনিটের মধ্যে তৈরি হয়ে যায় কাঙ্খিত স্বাদের (কমলা বা আম) শরবত। এসব পানীয়তে চিনি জাতীয় পদার্থের সাথে মেশানো থাকে অতি মাত্রার বিষাক্ত রঙ, যা শরীরের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর।

এছাড়া পুরনো ঢাকার ঐতিহ্যবাহী মাঠার স্বাভাবিক রঙ সাদা। অথচ অস্বাভাবিক রঙ ব্যবহার করে মাঠা বাজারজাত করা হচ্ছে এবং চড়া দামে বিক্রিও হচ্ছে।

নিজেদের স্বাস্থ্য সচেতনতার উদ্দেশ্যে সকলেরই উচিত বাইরের লোভনীয় খাবার পরিত্যাগ করে ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের অভ্যাস গড়ে তোলা।

আর বিক্রেতা ভাইদের উচিত অধিক লাভের আশায় নীতি বর্জন না করে ভাল মানের খাবার সরবরাহ করা।

ইফতারে রঙ

রোজা স্বর্ণা

 

Related posts

Leave a Comment